থাইল্যান্ডে গিয়ে এই কাজগুলো ভুলেও করবেন না, নাহলে পস্তাবেন!

webmaster

**

"A fully clothed woman in a modest, traditional Thai dress, standing respectfully in front of a beautifully decorated Thai temple. Safe for work, appropriate content, professional photography, perfect anatomy, correct proportions, natural pose, family-friendly, well-formed hands, proper finger count, natural body proportions."

**

থাইল্যান্ড, সোনালী মন্দিরের দেশ, শুধু সৌন্দর্য আর আতিথেয়তার জন্য বিখ্যাত নয়, এর সংস্কৃতিতেও রয়েছে কিছু বিশেষ নিয়মকানুন। এই নিয়মকানুনগুলো সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাই থাইল্যান্ডে বেড়াতে গেলে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো, না হলে অজান্তে এমন কিছু করে ফেলতে পারেন যা স্থানীয়দের মনে আঘাত করতে পারে। আমি নিজে যখন প্রথম থাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম, তখন কিছু বিষয় না জানার কারণে সামান্য অপ্রস্তুত হয়েছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি সম্পর্কে একটু ধারণা থাকলে আপনার ভ্রমণ আরও আনন্দময় হবে।আসুন, নিচের নিবন্ধে থাইল্যান্ডের সংস্কৃতিতে কী কী বিষয়গুলি বিশেষভাবে ശ്രദ്ധ দিতে হয়, সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

আসুন, থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি এবং রীতিনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:

পোশাকের শালীনতা: সম্মানজনক বেশভূষা

করব - 이미지 1
থাইল্যান্ড একটি বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, এবং এখানকার মানুষেরা তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে খুব সম্মান করে। পোশাকের ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখাটা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন কোনো মন্দির বা ধর্মীয় স্থানে যাওয়া হয়, তখন এই বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত। আমার মনে আছে, একবার আমার এক বন্ধু শর্টস পরে রাজপ্রাসাদ দেখতে গিয়েছিল, এবং তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাই থাইল্যান্ডে ঘুরতে গেলে কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার।

১. মন্দির পরিদর্শনে পোশাকের নিয়মাবলী

মন্দিরে প্রবেশের সময় শরীর যতটা সম্ভব ঢেকে রাখা উচিত। নারীদের জন্য ছোট হাতার পোশাক, টপস, এবং পুরুষদের জন্য শর্টস বা স্লিভলেস শার্ট পরিহার করা ভালো। লম্বা স্কার্ট বা প্যান্ট এবং শালীন টপ পরা যেতে পারে। অনেক মন্দিরের প্রবেশদ্বারে শাল বা কাপড় পাওয়া যায়, যা ব্যবহার করে শরীর ঢেকে নেওয়া যায়।

২. দৈনন্দিন জীবনে পোশাকের প্রভাব

সাধারণ জীবনেও থাইল্যান্ডের মানুষেরা মার্জিত পোশাক পছন্দ করে। যদিও পশ্চিমা পোশাকের চল বেড়েছে, তবুও খুব বেশি খোলামেলা পোশাক এখানে স্বাভাবিকভাবে নেওয়া হয় না। কর্মক্ষেত্রে এবং জনসমাগমের স্থানগুলোতে শালীন পোশাক পরাই ভালো।

শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ও ভাষার ব্যবহার

থাইল্যান্ডে শারীরিক অঙ্গভঙ্গি এবং ভাষার ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু নির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গি এবং শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা সম্মান ও শ্রদ্ধার প্রতীক। এই ছোটখাটো বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে থাইল্যান্ডে আপনার অভিজ্ঞতা আরও সুন্দর হবে।

১. ‘ওয়াই’ (Wai) এর ব্যবহার

‘ওয়াই’ হলো থাইল্যান্ডের একটি ঐতিহ্যবাহী অভিবাদন ভঙ্গি। দুই হাত একসঙ্গে বুকের কাছে এনে মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে সম্মান জানানো হয়। এই ভঙ্গি শুধু অভিবাদনের জন্য নয়, ধন্যবাদ জানানো বা বিদায় জানানোর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়।

২. পা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা

থাইল্যান্ডে পায়ের ব্যবহারকে অশুচি মনে করা হয়। তাই পা দিয়ে কোনো জিনিস নির্দেশ করা বা কারো দিকে পা রাখা উচিত নয়। এমনকি, টেবিলের উপর পা রাখা বা কোনো মূর্তির দিকে পা দেখানোও উচিত না।

৩. মাথা স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন

থাইল্যান্ডের সংস্কৃতিতে মাথাকে শরীরের সবচেয়ে পবিত্র অংশ হিসেবে ধরা হয়। তাই কারো মাথায় হাত দেওয়া বা স্পর্শ করাকে খুবই অভদ্রতা হিসেবে গণ্য করা হয়।

ধর্মীয় স্থান ও রাজতন্ত্রের প্রতি সম্মান

থাইল্যান্ডের মানুষেরা তাদের ধর্ম ও রাজতন্ত্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল। এই দুটি বিষয়কে সম্মান জানানো প্রত্যেক পর্যটকের জন্য অত্যন্ত জরুরি। থাইল্যান্ডের রাজা এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সম্মান করা থাই সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

১. মন্দিরে ছবি তোলা ও আচরণ

মন্দিরে ছবি তোলার আগে অনুমতি নিতে ভুলবেন না। কোনো মূর্তির দিকে সরাসরি ক্যামেরা তাক করা বা এমন কোনো আচরণ করা উচিত না, যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে। নীরবতা বজায় রাখুন এবং মন্দিরের নিয়মকানুন অনুসরণ করুন।

২. রাজতন্ত্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শন

থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের প্রতি সম্মান দেখানো প্রতিটি নাগরিক এবং পর্যটকের কর্তব্য। রাজার ছবি বা প্রতিকৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন এবং রাজপরিবার সম্পর্কে কোনো অসম্মানজনক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।

খাবার গ্রহণের আদবকেতা

থাইল্যান্ডে খাবার গ্রহণ করার সময় কিছু বিশেষ আদবকেতা মেনে চলা হয়। এই নিয়মগুলি থাই সংস্কৃতির অংশ এবং এগুলো অনুসরণ করলে আপনি স্থানীয়দের কাছে আরও বেশি সমাদৃত হবেন।

১. কাঁটাচামচ ব্যবহারের নিয়ম

থাইল্যান্ডে কাঁটাচামচ প্রধানত খাবার প্লেটে তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়, খাবার কাটার জন্য নয়। খাবার মুখে তোলার জন্য চামচ ব্যবহার করাই ভালো।

২. থালা শেয়ার করার নিয়ম

সাধারণত থাইল্যান্ডে সবাই একসঙ্গে খাবার শেয়ার করে খায়। এক্ষেত্রে, নিজের চামচ দিয়ে সরাসরি থালা থেকে খাবার না নিয়ে পরিবেশন চামচ ব্যবহার করাই ভালো।

বিষয় করণীয় বর্জনীয়
পোশাক শালীন পোশাক পরিধান করুন, শরীর ঢেকে রাখুন খুব বেশি খোলামেলা বা অশালীন পোশাক
শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ‘ওয়াই’ ব্যবহার করুন, সম্মানজনক আচরণ করুন পা দিয়ে কিছু নির্দেশ করা বা মাথায় স্পর্শ করা
ধর্মীয় স্থান নীরবতা বজায় রাখুন, ছবি তোলার আগে অনুমতি নিন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কাজ
খাবার গ্রহণ পরিবেশন চামচ ব্যবহার করুন, ধীরে-সুস্থে খান নিজের চামচ দিয়ে সরাসরি থালা থেকে খাবার নেয়া

জনসমক্ষে আবেগ প্রকাশ

থাইল্যান্ডে জনসমক্ষে খুব বেশি আবেগ প্রকাশ করাটা ভালো চোখে দেখা হয় না। বিশেষ করে রাগ, বিরক্তি বা ভালোবাসার প্রকাশ জনসম্মুখে না করাই উচিত।

১. হাসি মুখের গুরুত্ব

থাইল্যান্ডে হাসি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক মাধ্যম। যেকোনো পরিস্থিতিতে হাসিমুখে কথা বলা এবং শান্ত থাকা থাই সংস্কৃতির অংশ।

২. ব্যক্তিগত পরিসর বজায় রাখা

জনসমক্ষে ব্যক্তিগত আলোচনা বা ঝগড়া করা থেকে বিরত থাকুন। থাইল্যান্ডের মানুষেরা সাধারণত শান্ত ও মার্জিত আচরণ পছন্দ করে।

দরদাম করার নিয়মকানুন

থাইল্যান্ডের বাজারগুলোতে দরদাম করা একটি সাধারণ প্রথা। তবে এক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখা উচিত, যাতে বিক্রেতা এবং ক্রেতা উভয়ের প্রতি সম্মান বজায় থাকে।

১. ভদ্রভাবে দরদাম করুন

দরদাম করার সময় ভদ্র ও নম্রভাবে কথা বলুন। রাগান্বিত হওয়া বা চিৎকার করা উচিত না। হাসি মুখে দরদাম করলে ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

২. যুক্তিসঙ্গত দাম প্রস্তাব করুন

পণ্যের গুণগত মান এবং বাজারের দাম বিবেচনা করে যুক্তিসঙ্গত দাম প্রস্তাব করুন। খুব বেশি দাম কমানোর চেষ্টা করা উচিত না।থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ এবং ঐতিহ্যপূর্ণ। এই নিয়মকানুনগুলো জানার মাধ্যমে আপনি থাইল্যান্ডে একটি সুন্দর এবং সম্মানজনক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন।

লেখাটি শেষ করার আগে

আশা করি, থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি এবং রীতিনীতি সম্পর্কে এই আলোচনা আপনাদের ভালো লেগেছে। থাইল্যান্ডে ভ্রমণ করার সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে আপনার অভিজ্ঞতা আরও আনন্দময় হবে। দেশটির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে আপনি স্থানীয়দের কাছে আরও আপন হতে পারবেন। সুন্দর ভ্রমণ করুন!

দরকারী কিছু তথ্য

১. থাইল্যান্ডের স্থানীয় ভাষা থাই। কিছু সাধারণ থাই শব্দ শিখে রাখলে যোগাযোগ সহজ হবে।

২. ভ্রমণের আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নিন এবং সেই অনুযায়ী পোশাক নিন।

৩. সবসময় নিজের পরিচয়পত্র এবং জরুরি অবস্থার জন্য কিছু শুকনো খাবার সঙ্গে রাখুন।

৪. থাইল্যান্ডের মুদ্রা হলো থাই বাত (Thai Baht)। ভ্রমণের আগে কিছু বাত পরিবর্তন করে নিন।

৫. রাস্তার খাবার খাওয়ার সময় একটু সতর্ক থাকুন এবং দেখে শুনে খান।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সারসংক্ষেপ

পোশাকের শালীনতা বজায় রাখুন এবং ধর্মীয় স্থানগুলোতে উপযুক্ত পোশাক পরুন। শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ও ভাষার ব্যবহারে শ্রদ্ধাশীল হন। মন্দির ও রাজতন্ত্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। খাবার গ্রহণের সময় আদবকেতা মেনে চলুন। জনসমক্ষে আবেগ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। দরদাম করার সময় ভদ্রতা বজায় রাখুন। এই বিষয়গুলো মনে রাখলে থাইল্যান্ডে আপনার ভ্রমণ আনন্দ ও সম্মানে ভরে উঠবে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: থাইল্যান্ডে কী ধরনের পোশাক পরা উচিত?

উ: থাইল্যান্ডে পোশাকের ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখা ভালো। মন্দির পরিদর্শনের সময় অবশ্যই শরীর ঢেকে রাখা উচিত, যেমন লম্বা হাতাযুক্ত পোশাক এবং লম্বা প্যান্ট বা স্কার্ট পরা উচিত। খুব বেশি খোলামেলা পোশাক এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি স্থানীয়দের কাছে অসম্মানজনক মনে হতে পারে। সাধারণ রাস্তায় টি-শার্ট, শর্টস পরা গেলেও অতিরিক্ত সংক্ষিপ্ত বা আঁটসাঁট পোশাক না পরাই ভালো।

প্র: থাইল্যান্ডে কাউকে সম্মান জানানোর উপায় কী?

উ: থাইল্যান্ডে কাউকে সম্মান জানানোর সবচেয়ে প্রচলিত উপায় হলো ‘ওয়াই’ (Wai)। এটি হলো দুই হাত জোড় করে মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে সম্মান জানানো। বয়স্ক বা সম্মানী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ওয়াই করে সম্মান জানানো হয়। এছাড়াও, থাইল্যান্ডের রাজপরিবারের প্রতি সম্মান দেখানো এখানকার সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

প্র: থাইল্যান্ডে কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা উচিত?

উ: থাইল্যান্ডে কিছু বিষয় আছে যা এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন, জনসমক্ষে উচ্চস্বরে কথা বলা বা ঝগড়া করা উচিত নয়। পায়ের তালু দিয়ে কাউকে নির্দেশ করা বা কোনো পবিত্র বস্তুর দিকে পা রাখা অভদ্রতা হিসেবে গণ্য করা হয়। বুদ্ধমূর্তি বা মন্দিরের ছবি তোলা যেতে পারে, তবে এমনভাবে দাঁড়ানো উচিত নয় যাতে মূর্তির প্রতি অসম্মান দেখানো হয়। এছাড়াও, থাইল্যান্ডের রাজার বা রাজপরিবারের সদস্যদের সমালোচনা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।